মেহেরপুরে মাটির তৈরী জিনিস বিক্রি করে জীবন চলে এক গ্রামের মানুষের ।

মেহেরপুরে মাটির তৈরী জিনিস বিক্রি করে জীবন চলে এক গ্রামের মানুষের ।

হাসানুজ্জামান,মেহেরপুরঃ

কিশোর বয়সে মনের অজান্তেই মা- বাবার দেখা দেখিতে এই কুমোর জিবনে জড়িয়ে গেছেন মঞ্জুরী পাল। স্বামীর সংসারে এসেও একই কাজ। রাত দিন কাদামাটির কাজ করে যেন হয়ে গেছে মাটির মানুষ। সংসারে রয়েছে এক মেয়ে ২ ছেলে। জমি নেই। এ কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহের পাশা পাশি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করানোর পর মেয়েকে বিয়ে দেন।

আর বড় ছেলে এম এ পাশ করে একটি বেসরকারী সংস্থায় চাকরী করেন। ছোট ছেলে পড়ছেন উচ্চ মাধ্যমিকে। অন্য ব্যবসা করার মতো অর্থ না থাকায় বাধ্য হয়ে এ পেশায় নিয়োজিত।শুধু মঞ্জুরী পাল নয়, তার মতো শতাধিক পরিবারের লোকজন দিন রাত পরিশ্রম করেও দারিদ্রের কষাঘাত থেকে মুক্ত হতে পারছে না গাংনীর আমতৈল গ্রামের কুমোররা। একদিকে মাটি ও আনুষাঙ্গিক জিনিসের দাম বেড়েছে ।

অন্যদিকে প্লাস্টিকের চমক প্রদ দ্রব্যাদির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নিপুন শিল্পকর্ম খচিত মাটির জিনিষের কদর কমে গেছে। ফলে দৈন্যদশা বিরাজ করছে কুমোরদের মাঝে। স্বল্প সুদে ঋণ পেলে ঘুরে দাড়াতে পারে বলে জানিয়েছেন শতাধিক কুমোর পরিবার।মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দুরে আমতৈল গ্রাম। গ্রামের ২৭টি কারখানায় শতাধিক পরিবারের লোকজন মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িত। নারী- পুরুষ সবারই কাদামাটির গন্ধমাখা শরীর।

একসময় এদের নিপুন হাতের শিল্পকর্মে তকতকে কাদামাটি হয়ে উঠে নিত্য ব্যবহার্য বাসন পত্র, ফুলের টব, নান্দা, খেলনাসহ কারু কাজ করা শোপিচ। বেশ কদরও ছিল এসব জিনিষের। এনামেল ও প্লাস্টিকের তৈরী জিনিষের কদর বেড়ে যাওয়ায় মাটির তৈরী জিনিষের এখন আর সেই কদর নেই। এখন পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য তৈরী করা হচ্ছে মাটির পট। জেলার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন জেলাতেও বিক্রি হচ্ছে এসব জিনিস। এদের কাজের নিপুনতা ও সৌন্দর্য থাকলেও মলিন পোশাক, ও রোগ ব্যধির ফলে দ্রুত আসা বার্ধক্য একটা মলিন আবরণ ফেলে দিয়েছে।কারখানার মালিক স্বপন জানান, আগে এক ট্রলি মাটির দাম ছিল ২০০ টাকা।

এখন তা বেড়ে হয়েছে ১০০০ টাকা। জালানীর দামও বেড়ে গেছে। কারখানার মালামাল তৈরী ও চ‚লার জন্য জমি লীজ নিতে হয়। এক বিঘা জমি লীজ নিতে বাৎসরিক ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দিতে হয়। বছরের মাত্র ৮ থেকে ৯ মাস চলে এ ব্যবসা। অনেক কুমোর বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে মৃৎ শিল্পে বিনিয়োগ করেছেন।

আনুষঙ্গিক খরচ মিটিয়ে এমন কোন টাকা থাকে না যা দিয়ে সমিতির কিস্তি পরিশোধ করবেন। সরকার যদি স্বল্প সুদে কুমোরদের ঋণের ব্যবস্থা করতো তাহলে সকলেই স্বাবলম্বী হতে পারতো। একই কথা জানালেন মঞ্জুরী বালা পাল।গাংনী উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার কাজি আবুল মনসুর জানান, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির উন্নয়নের জন্য সরকার দুটি কর্মসুচী চালু করেছেন সরকার। একটি ভাতা কর্মসুচী অন্যটি ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচী। কুমোররা যদি ঋণের জন্য আবেদর করেন তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

আপনি আরও পড়তে পারেন